ইউএস নিউজটপ নিউজ

‘আমেরিকাকে আবার মহান ও ধনী’ করার ট্রাম্পের নীতি কঠিন পরীক্ষার মুখে

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পে

মধ্যরাতের সময়সীমার আগে কানাডা ও মেক্সিকোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারসহ ডজনখানেক দেশের সঙ্গে এখনো যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চুক্তি সম্পাদিত হয়নি।  প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকাকে আবার মহান করার স্বপ্ন বৃহস্পতিবার কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েছে।

দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদনের শেষ মুহূর্তের তোড়জোড়ের মধ্যেই ওয়াশিংটনের একটি আপিল আদালত ট্রাম্পের জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আমদানি পণ্যে ব্যাপক শুল্ক আরোপের বৈধতা নিয়ে শুনানি করে।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ৭৯ বছর বয়সী এই রিপাবলিকান নেতা আবারও জোর দিয়ে বলেন, শুল্কের মাধ্যমে ‘আমেরিকাকে আবার মহান এবং ধনী’ করা হচ্ছে। ট্রুথ সোশাল-এ তিনি লেখেন, ‘শুল্ক আমেরিকাকে আবার মহান ও ধনী করে তুলছে।’

তিনি আরও বলেন, নিজের সুরক্ষার জন্য বিদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করতে না পারলে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির কোনো টিকে থাকা বা সফলতার সুযোগ নেই।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, নতুন শুল্ক আরোপের পর শুল্ক আয়ের পরিমাণ বেড়েছে। তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন, এই শুল্ক মুদ্রাস্ফীতি উসকে দিতে পারে। যদিও দাম কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে, তবে তা এখনো সীমিত পর্যায়ে রয়েছে।

এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত ট্রাম্পের বহুল সমালোচিত শুল্কের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর শুনানি করছে। নিম্ন আদালতের রায় বেশিরভাগ শুল্ক কার্যকর হওয়া থেকে আটকে দিয়েছিল, যা ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, ফলে আপাতত শুল্কগুলো কার্যকর থাকছে।

শুক্রবারের সময়সীমা যত ঘনিয়ে আসছে, ট্রাম্প একের পর এক দেশকে শাস্তি কিংবা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন।

এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব চুক্তির আওতায় নতুন শুল্ক হার শুক্রবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।

দক্ষিণ কোরিয়া শেষ মুহূর্তে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পেরেছে, যেখানে ১৫ শতাংশ শুল্ক হার নির্ধারণ করা হয়েছে—যেটি ট্রাম্পের ঘোষিত সম্ভাব্য ২৫ শতাংশ হারের চেয়ে অনেক কম।

অন্যদিকে, ব্রাজিলের পণ্যের ওপর ট্রাম্প ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন—তবে তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন না করে কিছু ছাড়ও দিয়েছেন, যাতে ব্রাজিল যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে ডানপন্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে ‘কূ দে তা’ মামলাগুলো প্রত্যাহারে চাপ তৈরি করা যায়।

ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করা হয়েছে এবং কানাডাকে সতর্ক করা হয়েছে যে তারা যদি প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়, তবে বাণিজ্যিক প্রতিশোধের মুখে পড়তে পারে।

তবে যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলোর বিস্তারিত এখনো অস্পষ্ট। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চুক্তি সত্ত্বেও, তাদের ওয়াইন খাতের জন্য বিশেষ ছাড় চাচ্ছে।

এর পাশাপাশি, বিশ্ব অর্থনীতির ওপর এখনো ঝুলে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের মধ্যকার অনির্ধারিত বাণিজ্য যুদ্ধ। আগে উভয় দেশ একে অপরের ওপর শতকরা তিন অঙ্ক শুল্ক আরোপ করেছিল, এবং এখন উভয় দেশ একটি ‘ত্রুসমূলক’ আলোচনায় আছে।

যুক্তরাষ্ট্র এখনো তার প্রতিবেশী কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে কোনো চূড়ান্ত চুক্তি করতে পারেনি—যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্প তাদের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সেপ্টেম্বরে প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর, তাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়েছে।

ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য তাদের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করা কঠিন করে তুলবে।’

কার্নি বুধবার বলেন, ‘সম্ভবত ১ আগস্টের মধ্যে আলোচনার সমাপ্তি ঘটবে না।’

এর আগে মার্কিন বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক ফক্স নিউজকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের সঙ্গেও চুক্তি করেছে, তবে বিস্তারিত জানাননি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই নতুন শুল্ক বৃদ্ধি ঘোষণা করা হয়েছিল এপ্রিলে। তখন ট্রাম্প প্রায় সব বাণিজ্য অংশীদারের ওপর কমপক্ষে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন—অন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলনের অভিযোগে।

এই শুল্ক হার বিভিন্ন দেশের জন্য ধাপে ধাপে বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল, তবে ওয়াশিংটন দুইবার তা কার্যকর করার সময়সীমা পিছিয়ে দেয়।

ট্রাম্প বর্তমানে তামার পণ্যের ওপর পূর্বঘোষিত ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন।

গত কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে ‘দর কষাকষি’ চলছিল। এরইমধ্যে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাশাপাশি রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র কিনলে ভারতের ওপর বাড়তি জরিমানার কথাও বলেছেন।

এর আগে, গত এপ্রিলে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তা কার্যকরের সময়সীমা পিছিয়ে পহেলা আগস্ট করেছিলেন।

তার আগেই আবারও শুল্কহার ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প। তবে বিষয়টা এখানেই থেমে থাকেনি।

ভারতের বাণিজ্য নীতির সমালোচনার পাশাপাশি একাধিক মন্তব্যে রাশিয়া ও পাকিস্তানের প্রসঙ্গ টেনে এনে ভারতকে কটাক্ষও করতে ছাড়েননি মি. ট্রাম্প। এভাবে তিনি আমেরিকাকে আবার মহান ও ধনী করতে চান।

আরও পড়ুন: ইলন মাস্কের টেসলার বিরুদ্ধে মামলা করলেন ১০ হাজার ক্রেতা

বাফেলো বাংলা নিউজ/ এইচএইচ

Related posts

বাজেটে সংশোধনীর আহ্বান জানাল বাফেলো কমন কাউন্সিল

msdzeroo

ফ্যামিলি বার্বিকিউ পার্টি ২ আগস্ট : ব্যাক টু স্কুল কর্মসূচী ২২ আগস্ট

msdzeroo

উত্তর আমেরিকা ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রতিবাদে নিউইয়র্কে ব্যাপক বিক্ষোভ, গ্রেপ্তার ৮৬

msdzeroo

Leave a Comment