অবশেষে আমেরিকার কংগ্রেসে পাস হয়ে গেল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহু আলোচিত ‘বিগ বিউটিফুল বিল’। এই বিলের মধ্য দিয়ে কর হ্রাস, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বড় ধরনের কাটছাঁটের মতো একাধিক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত আইনে পরিণত হতে চলেছে।
বৃহস্পতিবার প্রতিনিধি পরিষদে মাত্র চার ভোটের ব্যবধানে বিলটি পাস হয়—২১৮-২১৪। সিনেটে ইতিমধ্যেই বিলটি পাস হয়েছে ৫১-৫০ ভোটে। সমান সংখ্যক ভোট পড়ায় শেষ পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স টাই ভেঙে বিলের পক্ষে ভোট দেন। এতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা সত্ত্বেও বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার সব বাধা কাটিয়ে উঠেছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ৪ জুলাই, আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসে এতে স্বাক্ষর করবেন। অর্থ্যাৎ শুক্রবার থেকে এটি ট্রাম্পের স্বাক্ষর শেষে আইন হিসেবে কার্যকর হবে।
বিলটি মূলত ২০১৭ সালে তাঁর প্রথম মেয়াদে পাস হওয়া করছাড় আইনটির সম্প্রসারিত রূপ। এবার সেটিকে স্থায়ী রূপ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে অভিবাসন কড়াকড়ি এবং প্রতিরক্ষা খাতে বড় অঙ্কের ব্যয়। তবে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক তৈরি হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ব্যাপক অর্থছাঁট নিয়ে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বিলটি কার্যকর হলে কমপক্ষে দেড় কোটিরও বেশি আমেরিকান নাগরিক স্বাস্থ্য বিমা হারাতে পারেন। মূলত নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষদের জন্য চালু থাকা মেডিকেইড কর্মসূচি ও খাদ্য সহায়তা খাতে প্রায় ৯৩০ বিলিয়ন ডলারের ব্যয় ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা রয়েছে এতে। অনেক রাজ্যে এই সিদ্ধান্তের ফলে ফেডারেল সহায়তা নির্ভর স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে গ্রামীণ, কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিনো জনগোষ্ঠীর ওপর। অনেকেই বাধ্য হবেন ব্যয়বহুল প্রাইভেট স্বাস্থ্যবিমায় যেতে, যা তাদের সাধ্যের বাইরে।
বিলটি নিয়ে শুরু থেকেই ডেমোক্র্যাটরা তীব্র বিরোধিতা করে আসছিলেন। তাঁদের মতে, এই বিল সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে এবং নিম্নআয়ের আমেরিকানদের জীবন আরও দুর্বিষহ করে তুলবে। তবে রিপাবলিকানদের একাংশের আপত্তি থাকলেও শেষ মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপের মুখে প্রায় সবাই দলীয় অবস্থানেই ফিরে যান।
এখন প্রশ্ন উঠছে, আগামী নির্বাচনে এই বিলের রাজনৈতিক প্রভাব কতটা গভীর হবে। ট্রাম্প শিবির অবশ্য এটিকে ‘জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রমাণ’ হিসেবে তুলে ধরছে। তবে বিল কার্যকর হলে যে লাখো আমেরিকান পরিবার স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও খাদ্য সহায়তা হারাবে, তা নিয়ে দেশজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে।